চাকরির বাজার এখন ভীষণ প্রতিযোগিতাপূর্ণ। একই চাকরির জন্য যেমন ব্যবসায় শিক্ষায় পড়া শিক্ষার্থী আবেদন করছেন, তেমন বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীও সিভি জমা দিচ্ছেন। অভিজ্ঞতার পাশাপাশি কিছু দক্ষতা ও সনদ থাকলে চাকরি পাওয়া সহজ হয়।
এক দশক আগেও অবশ্য শুধু ইংরেজি আর কম্পিউটারের দক্ষতাতেই প্রতিযোগিতায় কিছুটা এগিয়ে থাকা যেত। করোনা মহামারির পর পুরো পৃথিবীর চাকরির বাজার বদলে গেছে। এখন বিভিন্ন বিষয়ে জানা প্রার্থীদেরই চাকরির বাজারে বেশি চাহিদা। আপনাকে যেমন ইংরেজি জানতে হবে, তেমনি ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়েও ধারণা রাখতে হবে। আপনি হয়তো ব্যাংকে চাকরি খুঁজছেন। সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট বা প্রোগ্রামিংয়ে সনদ থাকলে মৌখিক পরীক্ষায় এগিয়ে থাকবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন কিছু সনদ অর্জন করে রাখতে পারেন। একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি এ ধরনের স্বল্পমেয়াদি কোর্স, সার্টিফিকেট কোর্স, ডিপ্লোমা কোর্স আপনার সফট স্কিল ও কারিগরি দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করবে।
কেন প্রশিক্ষণ প্রয়োজন
বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো সময়ের পড়াশোনা অনেকটাই তাত্ত্বিক বা ক্লাসরুমনির্ভর। প্রকৌশল বা বিজ্ঞানের অনেক বিষয়ে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের সুযোগ থাকে। অনেক শিক্ষার্থী ক্লাসরুমের পড়াশোনার মধ্যে আটকে থাকেন বলে পরে চাকরির বাজারে বেশ সমস্যায় পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের চার বছরে একটু পরিকল্পনা করে প্রশিক্ষণ নেওয়ার চেষ্টা করুন। খেয়াল করে দেখবেন, এখন অনেক পেশাজীবী চাকরির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের স্বল্পমেয়াদি কোর্স, ডিপ্লোমা সনদ ও প্রশিক্ষণের জন্য সময় দেন। এসব কোর্স, সনদ আপনাকে চাকরি পাওয়ার পরও সহায়তা করতে পারে। প্রয়োজন বুঝে দক্ষতা অর্জন করুন।
কোথা থেকে প্রশিক্ষণ নেবেন
এখন সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ আছে। উচ্চমাধ্যমিক পাস করলেই এসব প্রশিক্ষণ ও সনদের জন্য ভর্তি হতে পারেন। বেসরকারি ও বিদেশি অনেক সংস্থা আছে, যেখান থেকেও কারিগরি বিভিন্ন বিষয়ে কোর্স করতে পারবেন, প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। যেকোনো কোর্সে ভর্তির আগে অবশ্যই ভালোভাবে খোঁজখবর নেবেন। আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা বিভাগের প্রাক্তণীদের সঙ্গে আলাপ করতে পারেন। অনেক কোর্স আছে, যেগুলো আপাতদৃষ্টে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, কিন্তু আদতে তা নয়। তাই বুঝেশুনে কোর্সে যোগ দিন।
কী কোর্স করবেন
কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্ব দিতে পারেন। প্রথমত এমন কোর্সই বেছে নিন, যা আপনার আগ্রহ ও স্নাতকের বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এমনও হতে পারে, আপনি যে বিষয়ে পড়েছেন, সে বিষয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চান না। হয়তো অন্য কোনো পেশায় আপনার একধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে। সেই পেশা-সংক্রান্ত কোর্স করেও এগিয়ে যেতে পারেন। যেমন ধরা যাক, কেউ প্রকৌশলে পড়েছেন, কিন্তু তাঁর আগ্রহ ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে। ডিজিটাল মার্কেটিং-সংক্রান্ত কোনো স্বল্পমেয়াদি কোর্স আপনি করতেই পারেন।
ভাষাগত দক্ষতাও কিন্তু বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এখন সবাই আমরা কমবেশি ইংরেজি জানি। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষার চর্চা ও লেখার দুর্বলতা আছে অনেকের। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট আছে। ৩ থেকে ৬ মাসের ইংরেজি ভাষার কোর্সে ভর্তি হতে পারেন।
কোডিং, প্রোগ্রামিং ও ডেটা অ্যানালাইসিসের প্রশিক্ষণও ইদানীং গুরুত্ব পাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় খোঁজ নিলেই দেখবেন কম্পিউটার সেন্টার বা কম্পিউটার বিভাগে এ বিষয়ে কোনো না কোনো প্রশিক্ষণের সুযোগ আছে। কখনো কখনো ক্যাম্পাসের ক্লাবগুলোও প্রশিক্ষণের আয়োজন করে। নিজের আগ্রহ ও প্রয়োজন বুঝে যুক্ত হয়ে যান। এই সনদ আপনার সিভিকে আরও গ্রহণযোগ্য করবে।
কর্মবাজারের চাহিদা বুঝে এখন সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, মাইক্রোসফট এক্সেল, পাইথন প্রোগ্রামিং, ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মতো বিষয়ে প্রশিক্ষণকে বেশ গুরুত্ব দেওয়াও হচ্ছে। এসব বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের জন্য স্বল্পমেয়াদি কোর্স কিংবা ডিপ্লোমা কোর্স বাছাই করে ভর্তি হতে পারেন।
কয়েকটি কোর্সের খোঁজখবর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে ইংরেজি, ফরাসি, রুশ, স্প্যানিশসহ বিভিন্ন ভাষায় সার্টিফিকেট কোর্স, ডিপ্লোমা ও উচ্চতর ডিপ্লোমা কোর্স করার সুযোগ আছে। তিন মাস থেকে এক বছর মেয়াদি বিভিন্ন কোর্সে ভর্তির ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ডিজিটাল কনটেন্ট ক্রিয়েশন বিষয়ে স্বল্পমেয়াদি কোর্স করার সুযোগ আছে। তিন মাসব্যাপী এই কোর্সে গ্রাফিক ডিজাইন, স্ক্রিপ্ট রাইটিং ও ভিডিও প্রোডাকশনের নানা বিষয় হাতে কলমে শেখা যায়। কোর্স ফি ১৫ হাজার টাকা।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) থেকে ডিপ্লোমা সনদ নেওয়ার সুযোগ আছে সবার। কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ইন্টারনেট প্রোগ্রামিং ও ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার প্রকৌশল, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, মাল্টিমিডিয়া ও গ্রাফিক ডিজাইন, যোগাযোগ প্রযুক্তি ও কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনে ছয় মাসের ডিপ্লোমা করার সুযোগ আছে। উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ যেকোনো শিক্ষার্থী এই ডিপ্লোমায় ভর্তি হতে পারবেন। কোর্সভেদে খরচ পড়বে প্রায় ১২ হাজার টাকা। এ ছাড়া কুয়েটের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট থেকে ‘প্রোফেশনাল ডিপ্লোমা ইন ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট’ কোর্স করার সুযোগ আছে। উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ যেকোনো শিক্ষার্থী এই ডিপ্লোমায় ভর্তি হতে পারবেন। খরচ পড়বে প্রায় ২৫ হাজার টাকা।
অফিস অ্যাপ্লিকেশন ফর স্মার্ট অফিস, ইন্ট্রোডাকশন টু প্রোগ্রামিং অ্যান্ড ডেটা অ্যানালাইসিস উইথ পাইথন ও ডেটাবেজ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমস ফর ফ্রিল্যান্সার বিষয়ে সার্টিফিকেট কোর্স করার সুযোগ দিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউট। তিন মাসের একেকটি কোর্সের খরচ পড়বে ৪ থেকে ৫ হাজার ৮০০ টাকা। উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ যে-কেউ এই কোর্সে ভর্তি হতে পারবেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেকট্রিক্যাল সেফটি ম্যানেজমেন্ট ফর হোম অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বিষয়ে স্বল্পমেয়াদি কোর্স করার সুযোগ আছে। সেফটি ম্যানেজমেন্ট ইন কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি, বয়লার অপারেশন, মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড সেফটি বিষয়েও কোর্স করতে পারেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএস অফিস ও ডেটা অ্যানালাইসিস বিষয়ে স্বল্পমেয়াদি কোর্স করতে পারেন। ৪০ ঘণ্টার ক্লাসে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সফটওয়্যারের ব্যবহার শেখেন।
বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল থেকে ডিপ্লোমা ইন ইনফরমেশন ও কমিউনিকেশন টেকনোলজি বিষয়ে কোর্সে অংশ নিতে পারেন। ১২ মাসের এই কোর্সে ভর্তি হতে উচ্চমাধ্যমিক পাস হতে হবে। খরচ পড়বে ২৫ হাজার টাকার মতো।