দেশের অপটিক্যাল ফাইবার অবকাঠামোকে উল্লেখযোগ্যভাবে সম্প্রসারিত করেছে ফাইবার এট হোম।শুধু তাই নয় বিভিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবাকে একীভূত করতে,ডিজিটাল বিভাজন দুর করতে এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন তরান্বিত করতে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
বাংলাদেশে নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) ধারণা প্রথম যে কোম্পানিটি চালু করেছে তার নাম ফাইবার এট হোম লিমিটেড।
যে উদ্ভাবনী উদ্যোগের মাধ্যমে কোম্পানিটি দেশে্র সরকার, মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর, আইএসপি, কেবল টিভি অপারেটর, গেটওয়ে অপারেটর এবং দেশের অন্যান্য অ্যাক্সেস নেটওয়ার্ক সার্ভিস (এএনএস) অপারেটরদের জন্য একটি কমন নেটওয়ার্ক তৈরি করতে সহায়তা করেছে।
এনটিটিএন ধারণাটি বিভিন্ন অপারেটরের মধ্যে আন্তঃব্যবহারযোগ্যতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছে এবং সামষ্টিক ক্ষমতা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি করেছে। ১৫ বছর আগে দেশে ট্রান্সমিশন ব্যান্ডউইথ যে দামে পাওয়া যেত সেই একই দামে বর্তমানে ১০০০ গুণ বেশি ট্রান্সমিশন ব্যান্ডউইথ পাওয়া যাচ্ছে। এটি মূলত একটি কমন অবকাঠামো এবং ইন্টারঅপারেবল প্রযুক্তির কারণে বাস্তবে সম্ভব হয়েছে। এই উদ্যোগটি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে একটি বিশাল প্রভাব প্রত্যক্ষ করেছে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশকে বাস্তবে পরিণত করার অন্যতম প্রধান ভিত্তি ছিল।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সিঙ্গাপুরে মেরিনা বে স্যান্ডস এক্সপো এবং কনভেনশন সেন্টার এ অনুষ্ঠিত মর্যাদাপূর্ণ এশিয়া টেলিকম অ্যাওয়ার্ড ২০২৪-এ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনিশিয়েটিভ অফ দ্য ইয়ার বিভাগে এ্যাওয়ার্ড লাভ করেছে বাংলাদেশের ফাইবার এট হোম লিমিটেড। এই অসাধারণ অর্জনটি দেশের টেলিযোগাযোগ শিল্পে উৎকর্ষ এবং উদ্ভাবনের কোম্পানিটির প্রতিশ্রুতির একটি প্রমাণ।
ফাইবার এট হোম ধারাবাহিকভাবে অসামান্য ডেডিকেসন এবং পারফরম্যান্স প্রদর্শনের ফলে দেশিয় টেলিকম কোম্পানি হিসেবে অসাধারন এ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে।গত বছর এই পুরস্কার জিতেছিল বহুজাতিক কোম্পানি রবি আজিয়াটা।
এশিয়া টেলিকম অ্যাওয়ার্ড সেই সংস্থাগুলিকে স্বীকৃতি দেয় যারা এই অঞ্চলে টেলিযোগাযোগের অগ্রগতিতে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রেখেছে এবং ফাইবার এট হোম -এর সাফল্য সত্যিই প্রশংসনীয়।কোম্পানির পক্ষ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা,আজাদ চৌধুরী এবং চিফ বিজনেস ডেভেলপমেন্ট অফিসার,মোহাম্মাদ মোজাহিদুল ইসলাম ।
এশিয়া টেলিকম অ্যাওয়ার্ড ২০২৪ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন ফাইবার এট হোম এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা,আজাদ চৌধুরী
ফাইবার এট হোম এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা,আজাদ চৌধুরী জানান, ২০০৯ সালের আগে, বাংলাদেশের খুব কম জেলায় সীমিত পরিসরে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক ছিল।ফাইবার এট হোম -এর এই ১৫ বছরের যাত্রায় কোম্পানিটি এক মিলিয়ন কোর-কিলোমিটার তারের অবকাঠামো তৈরি করেছে এবং ৮ বিভাগে ৬৪টি জেলা,৪৯৫টি উপজেলা এবং ৩৯২৩টিরও বেশি ইউনিয়ন (নগর সরকারের সর্বনিম্ন স্তর হিসাবে চিহ্নিত) কভার করেছে। ডিজিটাল বিভাজন দূর করতে কোম্পানিটি ক্রমাগত তার নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করছে এবং দেশের সবচেয়ে গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে কভার করছে। সর্বোচ্চ মানের পরিষেবা নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠানটি মাল্টিপাল রিডাডেনট পাথ ব্যাবহার করে একটি অত্যাধুনিক টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করেছে ।
তিনি জানান,আমাদের দেশের মতো এতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে আমরা যে অবকাঠামো তৈরি করেছি তার ফলে মহামারি করোনা ভাইরাসের সময় আমাদের শিক্ষা ,স্বাস্থ্য অর্থনীতি সঠিকভাবে চলেছে। ইন্টারনেট আগে জিডিপিতে ১৫ শতাংশ অবদান রাখতো কিন্তু কোভিড পরবর্তী অর্থনীতিতে এখন জিডিপিতে প্রায় ২২ শতাংশ অবদান রাখছে। আমাদের অবকাঠামো এখন প্রায় ৮ কোটি গ্রাহক ব্যাবহার করছে।
আজাদ চৌধুরী বলেন,আমরা একটা ইকোসিস্টেম তৈরি করেছি যাতে সরকার, মোবাইল অপারেটর,ইন্টারনেট সেবাদাতা সহ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ইন্টারনেট পৌঁছে দিতে আমাদের অবকাঠামো ব্যাবহার করতে পারে। আমরা এখানে ফেসিলেটর এর ভুমিকা পালন করছি।এই অবকাঠামো তৈরি করতে আমাদের অনেক লম্বা সময় ধরে বিনিয়োগ করে যাচ্ছি আবার নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাথে রেভিনিউ শেয়ার করছি।
তিনি বলেন, দিন দিন ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ এর চাহিদা বাড়ছে কারন অনেক কন্টেন্ট এসেছে, একটা ভিডিও দিয়ে যা শেখা যায় তা কয়েক পৃষ্ঠা লিখে বোজানো যায় না।কন্টেন্ট এর চাহিদার ফলে ক্লাউড এর ব্যাবহার বাড়ছে কারন ডাটা নিজের কাছে স্টোর করে রাখা ব্যয়বহুল।দেশের ১৮ কোটি জনসংখ্যার যেহেতু তরুন জনগোষ্ঠীই বেশি তাই ব্যান্ডউইথ এর চাহিদাও বেশি।আমরা চাই আমাদের অবকাঠামো আরও বেশী মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে দিক আমাদের ইন্টারনেট সেবাদাতারা তাহলেই এতো বড় টেলিকম নেটওয়ার্ক এর বিনিয়োগ ও রক্ষণাবেক্ষণ সঠিকভাবে আমরা পরিচালিত করতে পারব ।
এশিয়া টেলিকম অ্যাওয়ার্ড ২০২৪ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন চিফ বিজনেস ডেভেলপমেন্ট অফিসার মোহাম্মাদ মোজাহিদুল ইসলাম
ফাইবার এট হোম এর চিফ বিজনেস ডেভেলপমেন্ট অফিসার মোহাম্মাদ মোজাহিদুল ইসলাম বলেন,দেশের প্রথম এনটিটিএন হিসেবে ফাইবার এট হোম আমাদের তৃণমুলের গ্রাহকদের প্রতিযোগিতামূলক মূল্য বলিষ্ঠ অবিচ্ছিন্ন নেটওয়ার্ক প্রদান করতে বদ্দপরিকর। মর্যাদাপূর্ণ এশিয়া টেলিকম অ্যাওয়ার্ড জিততে পারা আমাদের ও দেশের জন্য একটা গর্বের বিশয়।প্রায় ২৬ টি দেশের অবকাঠামো সেবা প্রদানকারীদের মধ্যে আমরা এই এ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছি। দেশের ২৬০০ ইউনিয়নে দ্রুতগতির ইন্টারনেট অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত, প্রতিস্থাপন, আপগ্রেডেশন, পরিচালনা এবং রেভিনিউ শেয়ারিংয়ের জন্য ফাইবার এট হোম লিমিটেড এর সাথে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপি চুক্তি স্বাক্ষর করলো বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল।আগামী ২০ বছর ২৬০০ ইউনিয়নে ইন্টারনেট সেবা সার্বক্ষনিক সচল রাখবে।
বাংলাদেশে ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক অর্জনের জন্য ফাইবার এট হোম-এর চেয়ারম্যান মঈনুল হক সিদ্দিকী উদ্ভাবনী প্রস্তাবটি নিজেই ডিজাইন করেন এবং নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন লাভ করেন। এরপর অবশ্য সরকার আরও দুটি বেসরকারী কোম্পানিকে এনটিটিএন হিসাবে কাজ করার জন্য লাইসেন্স প্রদান করে।