সারোয়ার হোসেন নামে মিরপুর নিবাসি এক ব্যবসায়ী পরিচিত এক সাংবাদিকের কাছ থেকে হোয়াটসঅ্যাপ একটি লিংক পান।দেখতে পান দেশের বৃহত্তম অনলাইন মার্কেটপ্লেস ‘দারাজ বাংলাদেশ’ একটি ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে। বিজয়ীকে দেওয়া হবে ‘আইফোন ১২’।
যেহেতু দারাজ থেকে তিনি প্রায়ই অনেক অফার এর নটিফিকেশন পান এবং বিভিন্ন পণ্য কিনেন তাই নতুন অফার ভেবে লিঙ্কে ক্লিক করেন এবং দারাজের লোগো দেখে বিজ্ঞাপনের পরবর্তী ধাপ অনুসরণ করেন সারোয়ার হোসেন। দ্বিতীয় ধাপে সারোয়ার হোসেনকে জানানো হয় তিনি আইফোন ১২ পেয়েছেন। শুধুমাত্র কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করলেই তাকে ফোনটি বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
এরপর তৃতীয় ধাপে বলা হলো, স্ক্রিনের লিঙ্কটি (http://lhmpwzy.co/ele/tb.php?ct=) ৫টি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বা ২০ জন ব্যক্তিকে পাঠাতে হবে। তাহলে পাওয়া যাবে ১০০ পয়েন্ট। এরপরেই মিলবে কাঙ্ক্ষিত সেই স্মার্টফোন। এইধাপও সম্পন্ন করেন সারোয়ার হোসেন। এরপর তাকে বলা হয় আরো একধাপ বাকি।
এখানে আসার পর সারোয়ার হোসেন দেখতে পান, ‘মোবাইল স্ক্রিনে লেখা রয়েছে, আপনাকে নীচের অ্যাপ্লিকেশনটি ইনস্টল করতে হবে এবং একবার ইনস্টল করার পর আপনাকে এটি ৩০ সেকেন্ডের জন্য খুলতে হবে। মনে রাখবেন এই পদক্ষেপটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাথে সংযুক্ত করা হয় একটি লিঙ্ক সম্বলিত ‘বাটন’।
এরপর ওই বাটনে চাপলে বলা হয় আপনি জিতেছেন, আপনার আইপি ঠিকানা ১১***২২২। এখন আপনাকে আপনার মোবাইল নম্বর দিতে হবে। এরপর তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর দিলে তাকে একটি (+911550055001) নম্বরে কল করতে বলা হয়। কল করার পর সারোয়ার হোসেনকে বিভিন্ন বাটনে চাপতে বলে প্রতারক চক্র।
এর কিছুক্ষণ পর মোবাইলের ব্যালেন্স শেষ হলে ফোন কেটে যায় সারোয়ার হোসেনের। ১ মিনিটের জন্য ফোন থেকে কাটা হয় ৩০০ টাকা। নম্বরের পরিচয় শনাক্তকারী অ্যাপ ‘ট্রু কলারের’ তথ্যমতে নম্বরটি অস্ট্রিয়ার।
কয়েক ধাপ পার হয়ে সারোয়ার হোসেন বুঝতে পারেন তিনি প্রতারিত হয়েছেন। তিনি লক্ষ্য করেন যে লিঙ্কটি তিনি পাঠাচ্ছেন তাতে লেখা রয়েছে, ‘Darez সমর্থকদের উপহার প্রদান’ এখানে Daraz এর নাম এবং শুনাম ব্যবহার করে সুকৌশলে ‘rez’ লেখা হয়েছে।
যেখানে ‘raz’ ব্যবহার করে দারাজ লেখা হয়। সেই সাথে ব্যবহার করা হয়েছে দারাজের লোগো এবং মেটা ডেস্ক্রিপশনে দারাজের লিঙ্ক (daraz.com.bd) সংযুক্ত করা হয়েছে।
সাধারণ জনগণ, পুলিশ, ব্যাংকার, সাংবাদিকসহ সবাইকে লিংকে ক্লিক করতে প্রলুব্ধ করে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে প্রতারক দল। নতুন এ প্রতারণার শিকার হয়েছেন অনেকেই। সুক্ষ্ম প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে ফোনের ব্যালেন্স এর টাকা, ফোন নম্বর, ইমেইল আইডি, আইপি ঠিকানাসহ ব্যক্তিগত অনেক তথ্য।
এ বিষয়ে দারাজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য জানতে চাইলে দারাজের মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিউকেশন ম্যানেজার সায়ন্তনী তিশা বলেন, সম্প্রতি বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা আমাদের ‘লিগাল টিমকে’ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। তাছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা আমাদের পেইজ এবং গ্রুপ থেকে প্রচারণা চালিয়ে আমাদের গ্রাহকদের সচেতন থাকার জন্য বলছি।
কিন্তু এরকম কোন সচেতনতামুলক পোস্ট দারাজের পেইজ , গ্রুপ বা কোন গণমাধ্যম এর মাধ্যমে এখনো প্রচার করেনি দারাজ বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ!