ডিজিটাল কারেন্সি ব্যবহার করে নিষিদ্ধ ‘স্ট্রিমকার’ অ্যাপের মাধ্যমে বছরে শতকোটি টাকা পাচার করা হচ্ছে। এই অ্যাপে গ্রাহক বাড়াতে এবং মানুষকে আকৃষ্ট করতে সুন্দরী তরুণীদের লাইভে এনে ফাঁদ পাতা হচ্ছে।
ঐ তরুণীদের লাইভে খুশি করতে অনলাইন কারেন্সি বিন্স এবং জেমস ব্যবহার করতে হয়। আর এই বিন্স ও জেমস বিক্রির মাধ্যমে চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। পরে তা বিভিন্ন ব্যাংক, ক্রিপ্টো কারেন্সি ও হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করা হয় বিভিন্ন দেশে।
পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) গত মঙ্গলবার নোয়াখালী জেলার সুধারামপুর, ঢাকা জেলার সাভার ও রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে—জমির উদ্দিন, কামরুল হোসেন ওরফে রুবেল, মনজুরুল ইসলাম হূদয় ও অনামিকা সরকার। গতকাল বুধবার রাজধানীর বারিধারায় এটিইউ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মাহিদুজ্জামান বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একটি বিশেষ অ্যাপ স্ট্রিমকার। বাংলাদেশে এই অ্যাপ নিষিদ্ধ হলেও ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কে এগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে মূলত চ্যাটিং করে থাকে। অন্য অপশনের মধ্যে জুয়াও রয়েছে। ব্যবহারকারীরা সাধারণত সুন্দরী মেয়ে ও সেলিব্রেটিদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার জন্য এই অ্যাপটি ব্যবহার করেন।
আটককৃতরা হলেন - জমির উদ্দিন (৩৫), কামরুল হোসেন ওরফে রুবেল (৩৯), মনজুরুল ইসলাম হৃদয় (২৬) ও অনামিকা সরকার (২৪)
এতে ইউজার আইডি ও হোস্ট আইডি নামে দুই ধরনের আইডি রয়েছে। হোস্টরা একটি হোস্ট এজেন্সির মাধ্যমে এই অ্যাপে হোস্টিং করেন। সুন্দরী মেয়ে এবং সেলিব্রেটিরাই সাধারণত এই এজেন্সির মাধ্যমে হোস্ট আইডি খোলেন। এতে বিন্স এজেন্সি ও হোস্ট এজেন্সি নামে দুই ধরনের এজেন্সিও রয়েছে। বিন্স এজেন্সিসমূহ বিদেশি এই অ্যাপটির অ্যাডমিনদের কাছ থেকে বিন্স ক্রয় করে ব্যবহারকারীদের কাছে বিক্রয় করে। এই অ্যাপের ব্যবহারকারী বিন্স ও হোস্টদের সঙ্গে লাইভ স্ট্রিমিংয়ে আড্ডা দেওয়ার জন্য গিফট হিসেবে টাকা দিয়ে ডিজিটাল কারেন্সি ক্রয় করে।
এখানে বিন্স ও জেম্স নামে দুই ধরনের ডিজিটাল কারেন্সি রয়েছে। প্রতি ১ লাখ বিন্সের মূল্য ১ হাজার ৮০ টাকা এবং প্রতি ১ লাখ জেমেসর মূল্য ৬০০ টাকা। কিন্তু এক বিন্স সমান এক জেম্স। ব্যবহারকারীরা হোস্টদেরকে গিফট্ হিসেবে বিন্স দিলেও ঐ বিন্স হোস্টদের কাছে এলেই তা জেমেস পরিণত হয়। সঞ্চিত জেমেসর পরিমাণের ওপরই নির্ভর করে হোস্টদের আয়। তবে হোস্টদেরকে মাস শেষে বেতন পাওয়ার জন্য শুধু সঞ্চিত জেম্সই যথেষ্ট নয়। তাকে প্রতিদিন এবং প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য লাইভ স্ট্রিমিংয়ে থাকতে হয়। তবে লাইভে থাকার জন্য সুন্দরী মেয়েদের প্রতি মাসে দেওয়া হয় নির্দিষ্ট পরিমাণ বেতন।
বিন্স এবং জেম্স এই দুইটি ডিজিটাল কারেন্সিই স্ট্রিমকারের চালিকাশক্তি। দেশীয় বিন্স এজেন্সিসমূহ সাব-এজেন্সি নিয়োগসহ কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দরী মেয়েদের বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্নভাবে লোভনীয় অফার দিয়ে লাইভ স্ট্রিমিংয়ে এনে ইউজারদের সঙ্গে প্রতারণাও করে থাকে। বাংলাদেশে যারা বিন্স এজেন্সি পরিচালনা করে তারা হুন্ডি, হাওয়ালা, ক্রিপ্টো কারেন্সি ও ব্যাংকের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে।
এটিইউর এসপি মোহাম্মদ আসলাম খান বলেন, বাংলাদেশে এ ধরনের ১২ থেকে ১৫ জন এজেন্ট রয়েছে যারা মাসে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। দেশের সরকারি-বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি ব্যাংকের মাধ্যমে দেশের বাইরে অর্থ পাচার হওয়ার তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। তাদের ধারণা অনুযায়ী স্ট্রিমকার অ্যাপ ব্যবহারকারী ঐ চক্র প্রায় শতকোটি টাকা দেশের বাইরে পাচার করেছে। প্রতারক চক্রের গ্রেফতারকৃত চার সদস্য ও তাদের পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে সাভার থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।