ঢাকা | শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ |
২৯ °সে
|
বাংলা কনভার্টার
walton

সবার গ্রাহক বাড়ে টেলিটকের কেন কমে ?

সবার গ্রাহক বাড়ে টেলিটকের কেন কমে ?
২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা অনুযায়ী ১১ মাসে টেলিটকের গ্রাহক ছিল মাত্র ৭১.৮৩ মিলিয়ন (৭ কোটি ১৮ লাখ ৩০ হাজার) / ছবি- সংগৃহীত

টেলিটকের ভেরিফাইড অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে সম্প্রতি পোস্ট করা ‘মিনিট বান্ডেল’ অফারের একটি ফটোকার্ডের নিচে ইমন নামের এক টেলিটক সিমের গ্রাহক অভিযোগ করে লেখেন, ‘সিম আছে বাট টাওয়ার না থাকায় নেটওয়ার্ক পায় না। তাই টেলিটক সিম ব্যবহার করতে পারি না।’

সজীব আহমেদ নামের আরেকজন অভিযোগ জানিয়ে লেখেন, ‘ঝিনাইদহ জেলা ও দায়রা জজ আদালত এলাকায় আদালতের বিল্ডিং ও আশপাশে অবস্থিত আইনজীবী সমিতির ভবন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয় এবং বিভিন্ন সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় টেলিটকের ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় না। বিল্ডিংয়ের রুমের মধ্যে কল করার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। ঠিক মতো নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। কর্তৃপক্ষের নিকট নিবেদন জানাই, সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।’

এমন শত শত গ্রাহক প্রতিনিয়ত টেলিটকের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের বিভিন্ন পোস্টের কমেন্টে টেলিটকের নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা নিয়ে তাদের বিভিন্ন অভিযোগ জানান। এসব অভিযোগের প্রতিটি কমেন্টের রিপ্লে দেওয়া হয় নিচের প্যাটার্নে—

প্রিয় গ্রাহক, আপনি কোন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন?

১. কল ড্রপ হচ্ছে?

২. বিদ্যুৎ চলে যাবার পর নেটওয়ার্ক পাচ্ছেন না?

৩. কোন সময় থেকে নেটওয়ার্ক-এর সমস্যা পাচ্ছেন?

৪. ইমারজেন্সি কল লিখা আসে? সেটা কতক্ষণ থাকে?

৫. আপনি যে এলাকায় নেটওয়ার্ক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন সেই এলাকার বিস্তারিত ঠিকানাসহ আপনার টেলিটক নম্বর এবং কন্টাক্ট নম্বর দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করুন।

কেউ কেউ বেশ আগ্রহ নিয়ে এসব প্রশ্নের উত্তর দেন আবার কেউ দেন না। তবে, এ দুই শ্রেণির কেউই সমাধান পান না। কারও সঙ্গে এসব সমস্যা নিয়ে পরবর্তীতে যোগাযোগ করে সমাধান করা হয়েছে— এমনটি কোনো ভুক্তভোগী নিশ্চিত করতে পারেননি।

খোদ ঢাকাতেই টেলিটকের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না বলেও অভিযোগ করেন অনেক গ্রাহক। মাসুদুর রহমান নামের এক গ্রাহক লেখেন, ঢাকার মেইন পয়েন্টে থেকে ১ জিবি নেট ব্যবহার করে শেষ করতে পারি না। কারণ, উনাদের (টেলিটক) নেট রুমের ভেতর ও বাইরে কোথাও আসে না, শুধু যায়।

এ অভিযোগের উত্তরে ওই একই কথা লিখে দায়িত্ব শেষ করেছে টেলিটক। অবশ্য, টেলিটকের ইন্টারনেট ডাটা কিংবা ভয়েস কল নেটওয়ার্ক নিয়ে এমন অসংখ্য অভিযোগ অনেকটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান না দিয়ে সব রোগের জন্য ‘প্যারাসিটামল ২ বেলা’ নীতির কারণে অনেক গ্রাহক টেলিটক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। আবার সাশ্রয়ী দামে বিভিন্ন ভয়েস অফার ও ইন্টারনেট ডাটা ব্যবহারের সুযোগ নিতে না পারায় অনেকের আফসোস-আক্ষেপেরও সীমা নেই— বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, ১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম মোবাইল ফোনের প্রচলন শুরু হয়। সেই থেকে আজ পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ের পথচলায় বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনের যাত্রায় বাংলাদেশও এগিয়েছে বহু দূর। ফলে শহরাঞ্চল থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত এখন মোবাইল ফোনের জয়জয়কার। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দেশের প্রায় ১৯ কোটি ৩৬ লাখ মানুষ বর্তমানে তারবিহীন নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত।

বাংলাদেশে এখন বাণিজ্যিকভাবে টেলিযোগাযোগ (ভয়েস, এসএমএস, ইন্টারনেট ডাটা) সেবা দিয়ে যাচ্ছে চারটি প্রতিষ্ঠান। সেগুলো হচ্ছে- গ্রামীণফোন, রবি আজিয়াটা, বাংলালিংক ও টেলিটক। এর মধ্যে একমাত্র টেলিটক বাংলাদেশই হচ্ছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর। প্রতিষ্ঠানটি ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ‘রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানি’-এর অধীনে নিবন্ধিত একটি পাবলিক কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ওই সময় থেকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের শত ভাগ মালিকানা এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের নিয়ন্ত্রণে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর হিসেবে সেবা দিচ্ছে টেলিটক। দেশের মানুষ মোবাইল ভয়েস, এসএমএস, ইন্টারনেট ডেটাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক সেবা টেলিটকের মাধ্যমে পাচ্ছেন। তবে, রাষ্ট্রায়ত্ত ও পুরোনো প্রতিষ্ঠান হয়েও দেশে ব্যবসা করা অন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কিংবা বিদেশি সমর্থনপুষ্ট অন্যান্য অপারেটরদের সঙ্গে দীর্ঘদিনেও তাল মেলাতে পারেনি টেলিটক বাংলাদেশ। বছরের পর বছর অন্যান্য মোবাইল অপারেটরদের গ্রাহক সংখ্যা বাড়লেও সেই অনুপাতে বাড়েনি টেলিটকের।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর প্রকাশিত পরিসংখ্যানেও উঠে এসেছে টেলিটকের দৈন্যদশা। তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত দেশে মোবাইলসেবা গ্রহণ করেছেন ৯০২.৭৩ মিলিয়ন (৯০ কোটি ২৭ লাখ ৩০ হাজার) মানুষ। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৪১৮.৫৮ মিলিয়ন (৪১ কোটি ৮৫ লাখ ৮০ হাজার), রবির গ্রাহক সংখ্যা ছিল ২৬৬.২৩ মিলিয়ন (২৬ কোটি ৬২ লাখ ৩০ হাজার), বাংলালিংকের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১৮৫.৫২ মিলিয়ন (১৮ কোটি ৫৫ লাখ ২০ হাজার) এবং টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যা ছিল মাত্র ৩২.৪ মিলিয়ন (৩ কোটি ২৪ লাখ)। ২০২৩ সালেও গ্রাহকের ‘ডাবল সংখ্যা’ থেকে ‘ট্রিপল সংখ্যা’য় পৌঁছাতে পারেনি টেলিটক বাংলাদেশ। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা অনুযায়ী ১১ মাসে গ্রামীণফোনের গ্রাহক ছিল ৮৯৩.৪৮ মিলিয়ন (৮৯ কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার), রবির গ্রাহক ছিল ৬২১.৪২ মিলিয়ন (৬২ কোটি ১৪ লাখ ২০ হাজার), বাংলালিংকের গ্রাহক ছিল ৪৬১.২৭ মিলিয়ন (৪৬ কোটি ১২ লাখ ৭০ হাজার) এবং টেলিটকের গ্রাহক ছিল মাত্র ৭১.৮৩ মিলিয়ন (৭ কোটি ১৮ লাখ ৩০ হাজার)। সবমিলিয়ে ২০২৩ সালে ১১ মাসে দেশে মোবাইলসেবা গ্রহণকারী গ্রাহক ছিল ২০৪৮.০১ মিলিয়ন (২০৪ কোটি ৮০ লাখ ১০ হাজার)।

মাসভিত্তিক টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যা পর্যালোচনা করে দেখলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়। দেখা যায়, ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে ৬.৬৮ মিলিয়ন (৬৬ লাখ ৮০ হাজার), ফেব্রুয়ারি মাসে ৬.৬৭ মিলিয়ন (৬৬ লাখ ৭০ হাজার), মার্চ মাসে ৬.৬৩ মিলিয়ন (৬৬ লাখ ৩০ হাজার), এপ্রিল মাসে ৬.৫৭ মিলিয়ন (৬৫ লাখ ৭০ হাজার), মে মাসে ৬.৫৪ মিলিয়ন (৬৫ লাখ ৪০ হাজার), জুন মাসে ৬.৪৯ মিলিয়ন (৬৪ লাখ ৯০ হাজার), জুলাই মাসে ৬.৪৭ মিলিয়ন (৬৪ লাখ ৭০ হাজার), আগস্ট মাসে ৬.৪৫ মিলিয়ন (৬৪ লাখ ৫০ হাজার), সেপ্টেম্বর মাসে ৬.৪৪ মিলিয়ন (৬৪ লাখ ৪০ হাজার), অক্টোবর মাসে ৬.৪৩ মিলিয়ন (৬৪ লাখ ৩০ হাজার) এবং নভেম্বর মাসে ৬.৪৬ মিলিয়ন (৬৪ লাখ ৬০ হাজার) মানুষ টেলিটকের সেবা গ্রহণ করেছেন। যেখানে ২০২২ সালে ১১ মাসে টেলিটকের মোট গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৭৪.৩৩ মিলিয়ন (৭ কোটি ৪৩ লাখ ৩০ হাজার ), সেখানে ২০২৩ সালের ১১ মাসে গ্রাহক সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৭১.৮৩ মিলিয়ন (৭ কোটি ১৮ লাখ ৩০ হাজার)।

অন্য অপারেটরদের গ্রাহক সংখ্যা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি-নভেম্বর মাস পর্যন্ত রবির মাধ্যমে সেবা নিয়েছেন ৫৯৬.৯ মিলিয়ন (৫৯ কোটি ৬৯ লাখ) গ্রাহক। ২০২৩ সালে ১১ মাসে যা দাঁড়িয়েছে ৬২১.৪২ মিলিয়নে (৬২ কোটি ১৪ লাখ ২০ হাজার)।

সবার গ্রাহক বাড়ে,টেলিটকের কেন কমে,মোবাইল গ্রাহক,টেলিটক
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
Transcend