বিগত ৫ বছর ধরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের বিটিসিএল-এর সকল প্রকল্প ও কার্যাদেশ ঘিরে গড়ে উঠেছিল একটি শক্তিশালী অবৈধ সিন্ডিকেট যাদের অপচেষ্টায় গত ১৫ বছর ধরে বিটিসিএল-এর সকল কার্যাদেশ রহস্যজনকভাবে পেয়ে যাচ্ছিল জেডটিই নামক চায়নিজ একটি কোম্পানি। জানা যায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের তৎকালীন মন্ত্রীর প্রিয়ভাজন, বিটিসিএল এর প্রাক্তন একজন। একই প্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা আরেকজন প্রাক্তন এমডি (অতিরিক্ত দায়িত্ব)। বাংলাদেশের একটি প্রভাবশালী ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদকের ভাতিজা এবং কতিপয় স্বার্থান্বেণী প্রতিষ্ঠানের মালিক সম্মিলিত একটি সিন্ডিকেট ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে জিম্মি করে উচ্চ কমিশনের বিনিময়ে ZTE নামক কোম্পানিকে ঢাক টেলিযোগাযোগ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সকল প্রকল্পের কাজ অন্যায় ও অবৈধভাবে পাইয়ে দিতে নেপথ্যে কাজ করে আসছে।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১১ সালে জরুরি অবস্থার সময় জাল টাকা ছাপানোর অপরাধে সিন্ডিকেটের একজন কারাভোগ করার পর থেকে তার নাম জনসাধারণের কাছে জাল টাকার কারবারি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। জনশ্রুতি আছে ওই কারবারি এই জাল টাকা ছাপিয়েছিল ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একজন প্রাক্তন শীর্ষ নির্বাহীর প্রেস থেকে। কারাভোগের সময় বারংবার রিমান্ডে তোলার পরেও ওই জাল কারবারি কখনো প্রেস ও প্রেসের মালিকের নাম প্রকাশ করেননি। মূলত এরপর থেকে তার প্রতি সাবেক মন্ত্রীর দায়বদ্ধতা ও বিশ্বস্ততা তৈরি হয় এবং হঠাৎ করে ওই গ্রেসের মালিক মন্ত্রী হনঃ এই সূত্র। ঘরে বিটিসিএল ঘিরে বর্ণিত সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে যারা বিগত ৫ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটিকে সম্পূর্ণভাবে জিম্মি করে জন্য কোন কোম্পানিকে বিটিসিএল সকল কার্যাদেশে অংশগ্রহণ করতে না দিয়ে কেবল ZTE কে কাজ পাইয়ে দিয়ে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি সাধন করে।
যেভাবে উন্মোচন হল অবৈধ সিন্ডিকেটের সকল অপকর্ম:ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের ধারাবাহিকতায় বিটিসিএল যখন দেশব্যাপী নিরবিচ্ছিন্ন সর্বাধুনিক টেলিযোগাযোগ ও আধুনিক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দেয়া, 5G নেটওয়ার্কের জন্য উচ্চ ক্যাপাসিটির সংস্থানসহ আগামি ২০৩০ সাল পর্যন্ত ক্রমবর্ধমান ব্যান্ডউইথ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে "৫জি'র উপযোগীকরণে বিটিসিএল এর অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক উন্নয়ন” প্রকল্পটি গ্রহণ করে তার বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে এই সিন্ডিকেটের বিগত ৫ বছরের সকল অপকর্ম ও সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের চিত্র।
অনুসন্ধানে দেখা যায় প্রকল্পটি গত এপ্রিল ২০২১ সালে মন্ত্রী ও তার প্রিয়ভাজন তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল মতিনের পছন্দ অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) কর্তৃক ২৮.৭৫ লক্ষ টাকা খরচ করে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা (Feasibility Study) সম্পাদন করা হয়। বুয়েট কর্তৃক সমীক্ষার আলোকে ITU এর স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ- পূর্বক প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়ন করে পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করলে বিগত ২২ ফেব্রুয়ারি' ২০২২ খ্রি. মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় সেটি অনুমোদিত হয়। যে সভায় তৎকালীন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার, জানান যে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অবকাঠামোগত উন্নয়নের মহাসড়কে উঠবে। সার্বিক বিবেচনায় তিনি প্রকল্পটি অনুমোদনের অনুরোধ জানান এবং ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ খ্রি. অনুষ্ঠিত একনেক সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেটি অনুমোদন করেন। একনেকে অনুমোদনের পরে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের অভিপ্রায় অনুযায়ি গত ১৩/০৪/২০২২ খ্রি. তারিখে বিটিসিএল কর্তৃক কারিগরি বিনির্দেশ (Technical Specification) প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। ট্রান্সমিশন খাতে কাজ করেছে এমন সম্ভাব্য দরদাতা এবং বিভিন্ন অংশীজনের (Stakeholder) সঙ্গে বিটিসিএল-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ০২/০৬/২০২২ খ্রি. মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং তাদের মতামত, পরামর্শ গ্রহণপূর্বক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং ডিপিপিসহ ITU এর স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ০৮/০৯/২০২২ তারিখে দরপত্রের কারিগরি বিনির্দেশ প্রস্তুত করা হয়। আইন ও বিধির ধারাবাহিকতা অনুযায়ী প্রকল্পের দরপত্র বিজ্ঞপ্তিটি ১৫/০৯/২০২২ খ্রিঃ ১টি বাংলা (দৈনিক ইত্তেফাক) এবং ১টি ইংরেজি দৈনিক (The Daily Observer) পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়।
এছাড়া বিটিসিএল এর ওয়েবসাইট এবং সিপিটিইউ এর ওয়েবসাইটেও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এমনকি অধিকতর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে গত ২৮/০৯/২০২২ খ্রি. Pre-Bid সভা আহবান করা হয় যেখানে দরপত্রে অংশগ্রহণকারী কেউ এ বিনির্দেশ (Specification)-এর বিষয়ে কোনো ধরনের আপত্তি বা অনুযোগ উত্থাপন করেননি। এছাড়া ৩০/১০/২০২২ খ্রি. তারিখে বিভিন্ন Bidder I Stakehold- er-দের সঙ্গে অনুষ্ঠিত BoD, BTCL এর সভায়ও কোনো দরপত্রদাতা বিষয়ে বা প্রযুক্তির বিষয়ে কোনো আপত্তি উত্থাপন করেননি।
এমতাবস্থায় পিপিআর-২০০৮ এর বিধি (৭) এর আওতায় গঠিত ৩(তিন) সদস্যের দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটির মাধ্যমে গত ২০/১২/২০২২ খ্রি. আন্তর্জাতিক দরপত্রটি উন্মুক্ত করা হয়। দরপত্র পদ্ধতি এক ধাপ দুই খাম পদ্ধতি হওয়ায় দরপত্র উন্মুক্ত- করণ কমিটি কর্তৃক শুধুমাত্র কারিগরি প্রস্তাব উন্মুক্ত করা হয়। মোট ৩(তিন)টি দরদাতা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দরপত্র দাখিল করা হয়। তারা হলেন Nokia, Huawei এবং ZTE Corporation। পিপিআর-২০০৮ এর বিধি (৮) এর আওতায় বিনির্দেশের গত ২৯.০৬.২০২২ খ্রি. বিটিসিএল এর পরিচালনা পর্ষদ এর অনুমোদনক্রমে এ প্রকল্পের প্যাকেজ জিডি-১ এর জন্য ০৭ (সাত) সদস্যবিশিষ্ট একটি মূল্যায়ন কমিটি বুয়েট, পুলিশ টেলিকম ও মন্ত্রণালয় এর প্রতিনিধিসহ গঠন করা হয়।
দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি Technical Evaluation-এ অংশগ্রহণকারী ৩টি দরদাতা প্রতিষ্ঠান Technically Responsive হিসেবে বিবেচিত করেন। মূলত ZTE ছাড়া হুয়াওয়েই ও নকিয়া এই দুটি কোম্পানি Technically Responsive হওয়ার বিষয়টি প্রথমবারের মত সিন্ডিকেটের স্বার্থে আঘাতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে প্রকল্পের HOPE বিটিসিএল এর প্রাক্তন এমডি (অতিরিক্ত দায়িত্ব) জনাব আসাদুজ্জামান ও ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী কোন যৌক্তিক কারন ছাড়া দেশের প্রচলিত প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সকল আইন কানুন অবজ্ঞা করে ৫ জি রেডিনেস এর এই টেন্ডারটি বাতিল করার অপচেষ্ঠায় লিপ্ত হন। ফলে আসাদুজ্জামান TEC হতে মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর গত ৩০/০৪/২০২৩ খ্রি. TEC -এর নিকট ৩টি দরদাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২টি দরদাতার বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে পত্র প্রেরণ করেন। TEC হতে ব্যাখ্যা প্রাপ্তির পর, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিটিসিএল গত ১৮ মে ২০২৩ খ্রি. চাহিত ব্যাখ্যার বিপরীতে প্রাপ্ত উত্তর সন্তোষজনক নয় উল্লেখপূর্বক কারিগরি মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুমোদন করা গেলো না মর্মে পুনঃদরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত প্রদান করে আরেকটি অনিয়মের জন্ম দেন। কেননা আলোচ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে ডিপিপি অনুযায়ী প্রাক্কলিত ব্যয় ৪৬৩.৯৬ কোটি টাকা। আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ অনুযায়ী HOPE এর ক্ষেত্রে অনুমোদনের সীমা পনের Huawei Technologies BD Ltd কর্তৃক পিপিআর-
২০০৮ এর বিধি ৫৭(২) অনুযায়ী দরপত্র প্রস্তাব বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরূদ্ধে প্রকল্প পরিচালকের নিকট অভিযোগ দাখিল করেন।
পরবর্তীতে বিষয়টি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের দৃষ্টিগোচর হলে এ বিভাগ হতে বিগত ২০-০৬-২৩ তারিখে সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট এর মতামত না পাওয়া পর্যন্ত এবং পরিচালনা পর্ষদ এর ক্রয় সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত দরপত্র প্রক্রিয়াকরণের সকল কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশনা বিটিসিএলকে দেয়া হলে- পরবর্তীতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব-এর পবিত্র হজ পালনের জন্য মক্কায় অবস্থানের সময়ে মন্ত্রী কার্যবিবিরণী সংশোধন করে দরপত্র পুনঃআহবানের জন্য সিদ্ধান্ত দেন।
এতকিছুর পরেও, বিটিসিএল এর পরিচালনা পর্ষদের কাছে আসাদুজ্জামান মন্ত্রীর নির্দেশে টেন্ডার বাতিল করায় বিধি ও প্রক্রিয়াগত স্পষ্ট বিচ্যুতি ঘটেছে মর্মে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হওয়ায় PPA-2006 এবং PPR-2008 এর সংশ্লিষ্ট বিধি-বিধানের আলোকে ত্রুটি-বিচ্যুতি সংশোধন করে বিদ্যমান সকল বিধিবিধান স্পষ্টভাবে পরিপালনপূর্বক দরপত্র প্রক্রিয়ায় দ্রুত নিষ্পত্তি করবেন মর্মে পর্ষদ হতে পুনরায় HOPE কে পরামর্শ দেয়ার পরেও তৎকালীন এমডি (অতিরিক্ত দায়িত্বে) জনাব আসাদুজ্জামান রহস্যজনক কারণে বিধি বহির্ভূতভাবে টেন্ডারে অংশ নেয়া তিনটি প্রতিষ্ঠানের দরপত্র বাতিল করে দেন।
আসাদুজ্জামানের এমন আদেশের বিরুদ্ধে M/s Huawei কর্তৃক PPR-2008 এর সংশ্লিষ্ট বিধি অনুযায়ী CPTU-এর জবারবা চধহবষ-২ তে অভিযোগ করলে রিভিউ প্যানেল বিগত ০৯/১০/২০২৩ খ্রি. উভয় পক্ষের শুনানিপূর্বক বিগত ১৭/১০/২০২৩ খ্রি. "দু'তরফা শুনানী শেষে বাদীর আপিল পূর্ণাঙ্গভাবে মঞ্জুর করতঃ প্রকল্প কার্যালয়ের প্রধান (HOPE) প্রদত্ত ২৭-০৮-২০২৩ তারিখের তর্কিত "Letter of Rejection (BTCL No 14.33.0000.001.07. 002.23/1) টি অকার্যকর ঘোষণা করে তিনটি প্রতিষ্ঠানের Technical Offer সমূহ Responsive ঘোষণার পাশাপাশি গ্রহণযোগ্য দরপত্রদাতাদের Financial Offer উন্মুক্ত করার জন্য BTCL-এর বোর্ডকে ব্যবস্থা নিতে এবং প্রকল্পের ক্রয়কারী কার্যালয়ের প্রধান (HOPE) জনাব আসাদুজ্জামান চৌধুরীসহ অন্যান্যদের (যদি থাকে) বিরুদ্ধে পিপিএ-২০০৬ এর ধারা ৬৪(৩) (৪) অনুসরণে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়সহ বিটিসিএল বোর্ড কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করেন। CPTU এর Review Panel এর আদেশ ও BoD এর
নির্দেশনার আলোকে TEC-কর্তৃক দাখিলকৃত কারিগরি মূল্যায়ন প্রতিবেদন ১৮-১০-২০২৩ খ্রি. তারিখে HOPE কর্তৃক অনুমোদন ও আর্থিক প্রস্তাব উন্মুক্তকরণের নির্দেশনা প্রদান করা হয় এবং ২২-১০-২০২৩ খ্রি. তারিখে আসাদুজ্জামান চৌধুরীকে বিটিসিএল হতে তাঁর মূল প্রতিষ্ঠান টেলিকম অধিদপ্তরে বদলি করা হয়। রিভিউ প্যানেল এবং বোর্ডের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৮-১০-২০২৩ খ্রিঃ তারিখে সংশ্লিষ্ট দরদাতাদের Financial Offer উন্মুক্তকরণের (Opening Date: ২৬-১০-২০২৩খ্রিঃ) নোটিশ জারী করা হলে। বিটিসিএল পদ হতে অব্যাহতি পাওয়ায় এবং সিপিটিউ এর রিভিউ প্যানেলের রায়ের সুপারিশ অনুযায়ী মন্ত্রণালয় ও দুদক কর্তৃক অনুসন্ধানের ব্যাপারে সংক্ষুব্ধ হয়ে জনাব সেলিম আশ্রাফের মত একটি রিট পিটিশন দায়ের করে বিগত ৩০-১০-২০২৩ খ্রিঃ তারিখে মন্ত্রণালয়ের বিগত ১৮-১০-২৩ তারিখের অফিস আদেশ এবং CPTU এর রিভিউ প্যানেলের রায় stay করান। ফলে উক্ত ৫ জিএ এই প্যাকেজের Financial Offer উন্মুক্তকরণ স্থগিত হয়ে যায়। HOPE প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব), আসাদুজ্জামান চৌধুরীর রিট করার মাধ্যমে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। তা না হলে উনার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের মুখোমুখি হতে তিনি ভয় কেন পাবেন। তাছাড়া তিনি বিটিসিএল এর স্থায়ী কর্মকর্তা ছিলেন না মূলত তিনি ডাক ও টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরের একজন স্থায়ী কর্মকর্তা যাকে বিটিসিএল এর এমডির অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছিল যেখানে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ায় সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক আদেশে তার স্থায়ী কর্মস্থল ডাক ও টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তরে বদলী করার পরেও কেন তিনি বিটিসিএল এর এমডি অতিরিক্ত দায়িত্বের পদ ফিরে পেতে আদালতে রিট করেন। আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় কোন শাস্তি প্রদান করেনি শুধুমাত্র অন্যত্র বদলী করা হয়েছে তথাপিও তিনি এই বদলীর বিরুদ্ধে সংক্ষুব্দ হলে প্রশাসনিক ট্রাইবুন্যালে না গিয়ে সরাসরি হাইকোর্টে সরকারী কর্মচারী হয়ে সরকারের আদেশের বিরুদ্ধে রিট করার মাধ্যমে সরকারি কর্মচারী আচরণ ও আপীল বিধিমালা ২০১৮ এর পরিপন্থী কাজ করেছেন।
পরিশেষে Chamber Judge এর আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ০৮-১১-২০২৩ খ্রি. তারিখ সকাল ৯:৩০ মিনিটে ৩ জন দরদাতার আর্থিক প্রস্তাব উন্মুক্তকরণ করা হয় যেখানে দেখা যায় সর্বনিম্ন বিডার হুয়াওয়েই থেকে ZTE এর বিডের ব্যবধান ৮৯ কোটি টাকা। হুয়াওয়েই কোম্পানী সর্ব নিম্ন বিডার হয়ায় অবশেষে বিগত ১৯-১১-২০২৩ তারিখে বিটিসিএল এবং হুয়াওয়েইর মধ্যে চুক্তি সম্পাদনের মধ্যে দিয়ে আলোর মুখ দেখে ৫ জি রেডিনেস প্রকল্পটি। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মনজির আহমেদকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন এই প্রকল্পের স্পেসিফিকেশনে যে প্রযুক্তি ধরা হয়েছে এটি বর্তমান বিশ্বে প্রচলিত লেটেস্ট প্রযুক্তি। প্রাক্তন এমডি (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আসাদুজ্জামান যে গ্রাউন্ডে দরপত্র বাতিল করেন তা সম্পূর্নভাবে পিপি আর ২০০৮ এবং ফিনাসিয়াল রুলসের পরিপন্থী। যদি এই বাতিল আদেশ পালন করা হত তবে সরকারের ঘোষিত স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মানে বিলম্বিত হবার সাথে সাথে সরকারের আরো ১৩৭ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হত।
এ বিষয়ে সচিব ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও চেয়ারম্যান বিটিসিএল বোর্ড আবু হেনা মোরশেদ জামানের সাথে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্ঠা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
অনুসন্ধান কমিটি কর্তৃক বিটিসিএল বর্তমান এমডি (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আনোয়ারের কাছে ৫ জি রেডিনেস প্রকল্পের জটিলতা কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন- দীর্ঘ তিন বছর ধরে এই প্রকল্পের সমীক্ষা, ডিপিপি তৈরি, একনেক কর্তৃক তা অনুমোদন, স্পেসিফিকেশন তৈরি এবং টেকনিকেল ইভালুয়েশন শেষে হঠাত করে পুরাতন প্রযুক্তির কথা বলে টেন্ডারটি বাতিল করার বিষয়টির কোন যৌক্তিকতা নেই। তথাপিও বোর্ড মিটিং এ এ বিষয়ে আমরা আলোচনা করি যেখানে বুয়েটের মাননীয় উপাচার্য (বিটিসিএল এর বোর্ডের একজন সদস্য) বলেন, ৫ জি রেডিনেস প্রকল্পের স্পেসিফিকেসনে যে প্রযুক্তির ধরা হয়েছে ITU এর স্ট্যান্ডার্ডে এটাই লেটেস্ট এবং বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও ভৌগলিক বিচারে এই প্রকল্পের প্রযুক্তির সমকক্ষ কোন প্রযুক্তি বিশ্বে এই মহুর্তে নেই। সুতরাং পুরাতন প্রযুক্তির দোহাই দিয়ে পুনরায় টেন্ডার আহ্বান করার কোন অবকাশ নেই।
অনুসন্ধানে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ZTE এর এক কর্মকর্তা হতাশ হয়ে মন্তব্য করেন হুয়াওয়েইর মত আমরাও এমন কম দামেও বিড করতে পারতাম যদি বাড়তি টাকা কমিশন না দিতাম। দীর্ঘদিন ধরে বিটিসিএল এ কর্মরত একজন কর্মকর্তা জানান দীর্ঘদিন থেকে এই সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম বিরাজ করছিল। ZTE এর অর্থায়নে মন্ত্রনালয় এবং অধিদপ্তরের বিভিন্ন কর্মকর্তারা বিদেশে লেখাপড়া করছেন এমনকি তাদেরকে বাড়িও কিনে দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের একজন শীর্ষ নির্বাহীর অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসা খরছও বহন করেছে কোম্পানিটি। যদিও ওই নির্বাহী তার স্ত্রীর চিকিৎসা বাবদ রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ৫ কোটি টাকারও বেশি উত্তোলন করেছেন।