সরকার ঘোষিত ‘এক দেশ এক রেট’ শতভাগ বাস্তবায়নের উদ্যোগকে পূর্ণতা দিতে আইএসপি’র পর নির্ধারণ করে দেয়া হলো আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) ও এনটিটিএন (ভূগর্ভস্থ ক্যাবল সেবা) সেবার মূল্য।
সর্বশেষ গত শনিবার (৭ আগস্ট) আইএসপিএবি ও আইআইজি ফোরামের সঙ্গে বৈঠক করে নতুন মূল্যের বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে। এজন্য গত ৭-৮ বছর ধরে মোট ৫২টি বৈঠক করে অংশীজনদের সম্মতির ভিত্তিতেই নতুন সেবা মূল্য নির্ধারণ করেছে বিটিআরসি। বুধবার (১১ আগস্ট) এই মূল্য ঘোষণা করার কথা রয়েছে। আর আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে তা কার্যকর হতে পারে। এতে করে গ্রাহক সেবার মান নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব আয়ও নিশ্চিত হবে বলে মনে করছেন প্রযুক্তি বোদ্ধারা।
সূত্রমতে, আইআইজির জন্য বিভিন্ন ভলিউমে ১১টা স্ল্যাবে ব্যান্ডউইথের মূল্য এবং এনটিটিএনগুলোর জন্য ট্রান্সমিশন ক্যাপাসিটির ভলিউম অনুযায়ী ১৫টি স্ল্যাবে সেবামূল্য বেঁধে দিয়েছে বিটিআরসি। এতে করে দেশের ৬৪টি জেলাতেই একই মূল্যে আইএসপিদের ব্যান্ডউইথ দিতে হবে আইআইজিকে। এক্ষেত্রে ব্যান্ডউইথের মূল্য হবে সাড়ে ৩শ থেকে সাড়ে ৪শ’টাকার মধ্যে।
অপরদিকে এনটিটিএন পর্যায়ে ১৫টি স্লাবের পাশাপাশি মেট্রোসিটি ও পার্শ্ববর্তী জেলাসহ নতুন কয়েকটি ক্যাটাগরি যুক্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ঢাকা থেকে অন্য কোনো জেলায় ট্রান্সমিশন খরচ ১৫-২৫ টাকার মতো কমবে। এখানে ট্রান্সমিশন খরচ ১০ এমবি থেকে ১০০ এমবি প্লাস হিসেবে খরচ কমছে অর্ধেকের মতো।
সব মিলিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে মানসম্মত ইন্টারনেট সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা নিয়ে আসবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করছেন, বিটিআরসি’র এই উদ্যোগ প্রায় এক যুগ ধরে তৈরি বিশৃঙ্খলার অবসান ঘটাবে।
এনটিটিএনগুলোর বিপক্ষে চলে আসা অভিযোগেরও ইতি ঘটাবে মন্তব্য করে এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন সামিট কমিউনিকেশন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আরিফ আল ইসলাম।
তিনি বলেছেন, এনটিটিএন এর রেট অনেক কমানো হয়েছে। বর্তমান মূল্য থেকে ২০-৪৫ শতাংশ কমানো হয়েছে। তাই শর্টটাইমে চ্যালেঞ্জ থাকবে। তারপরও একটা অফিসিয়াল ট্যারিফ নির্ধারণ করায় এটা ইন্ডাস্ট্রির জন্য ভালো, নয়তো ইন্ডাস্ট্রি আমাদেরকে ব্লেম করতো যে এনটিটিএনরা এটা আটকে রেখেছে। যদিও আমরা ট্যারিফ চেয়ে গত তিন বছর বিটিআরসিকে লিগ্যাল নোটিশ পর্যন্ত দিয়েছি।
আইআইজি ফোরামের মহাসচিব আহমেদ জুনায়েদ বলেছেন, আমি এই উদ্যোগকে পজেটিভ হিসেবে দেখছি। কেননা,এতে ইন্ডাস্ট্রিটা এখন একটি শেইপ পাবে। সেবার মান উন্নত হবে। প্রত্যেক ইউজারই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে উপকৃত হবে। আইএসপিরা সবচেয়ে বেশি বেনিফিট পাবে।
দীর্ঘ দিনের আন্দোলন সংগ্রামের পর ট্যারিফ পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আইএসপিএবি মহাসচিব ইমদাদুল হক বলেছেন, আমি মনে করি, এটা ইন্ডাস্ট্রির জন্য ভালো একটা দিক। শুরুটা হয়েছে অ্যাট লিস্ট, যেটা গত ২০ বছরে আমরা সবাই মিলে, ইভেন বিদেশী কনসালটেন্ট মিলে করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু বিটিআরসি’র কয়েকজন মেধাবী অফিসার এবং মন্ত্রণালয় ও ইন্ডাস্ট্রি মিলে আমরা শুরুটা করতে পেরেছি। এখন যে সমস্যা হবে টাইম টু টাইম বিটিআরসি ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে আমরা সমাধান করতে পারবো।
পুরো প্রক্রিয়ার জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং বিটিআরসি’র সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তিনটি পক্ষই।