মাইক্রোসফটের সমর্থিত ওপেন এআই –এর চ্যাটজিপিটি আসার পর থেকেই তা বেশ জনপ্রিয়। এই ধরনের এআই চ্যাটবটই ভবিষ্যত বলে মনে করছেন সকলে। সার্চ ইঞ্জিনের কাজও আগামিদিনে কেড়ে নিতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থাকা এই জাতীয় চ্যাটবট।
আর সেখানেই চিন্তা গুগলের। সার্চ ইঞ্জিনের জন্যই তো তার এত রমরমা। সেই বাজার যদি হাতছাড়া হয়ে যায়? তড়িঘড়ি বার্ড( Bard) এআই এনেছে গুগল। মাসখানেক আগেই বার্ড-এর বিষয়ে ঘোষণা করেন অ্যালফাবেট সিইও সুন্দর পিচাই। প্রাথমিকভাবে বার্ড নিয়ে সমালোচনা কম হয়নি। অনেকেই দাবি করেন, চ্যাটজিপিটি -র রমরমা দেখে ভয় পেয়ে তাড়াহুড়ো করেছে গুগল। তাই ঠিক করে ডেভেলপ, টেস্টিং না করেই বার্ড এনেছেন সুন্দর পিচাই।
তবে নিন্দুকের মুখে কালি দিয়ে ইতিমধ্যেই বার্ড-এর অফিসিয়াল সূচনা করেছে গুগল। চলতি সপ্তাহেই সংস্থা জানায়, ১৮০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে বার্ড শুরু হয়ে যাচ্ছে। অর্থাত্, আপনি চাইলে এখনই বিনামূল্যে বার্ড-এর চ্যাটবট ব্যবহার করা শুরু করতে পারেন।
বার্ড গুগলের লেটেস্ট লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল , পিএএলএম২ দ্বারা চালিত। পিএএলএম২ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলে স্যুইচ করার ফলে আগের তুলনায় আরও নির্ভুল কোডিং, গণিত সমাধান এবং যুক্তিগত দক্ষতা থাকছে নতুন বার্ডে।
বার্ড ব্যবহারের প্রাথমিক অভিজ্ঞতা কেমন? চ্যাটজিপিটি থেকে এটি কতটা আলাদা? ১. একটি সাধারণ C++ কোডিংয়ের প্রম্পটচ্যাটজিপিটি ও বার্ড, উভয় স্থানেই একই প্রম্পট দেওয়া হল। 'Write a simple C++ code for a calculator' । অর্থাত্, C++ -এর মাধ্যমে একটি সহজ, সাধারণ ক্যালকুলেটর বানাও। একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির কম্পিউটার সায়েন্স পড়ুয়ারা যা বেশ সহজেই লিখতে পারে।
বার্ড-এর কোড কম্পাইলারে ফেলে দেখা গেল,এরর আসছে।
তবে এই একই কোড, চ্যাটজিপিটি -র ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হয়নি। তাতে বেশ ভালভাবেই সাধারণ ক্যালকুলেটর রান করেছে।
অতি জটিল কোডিং টেস্ট করা হয়নি। তবে প্রাথমিকভাবে একটি সাধারণ কোডিংয়ের ক্ষেত্রে এক পা এগিয়ে থাকল চ্যাটজিপিটি ।
২. যুক্তিযত বিশ্লেষণআসন্ন নির্বাচন ২০২৩-এ কাদের জয়ের সম্ভাবনা বেশি? অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকও এই নিয়ে কম শব্দে গুছিয়ে বলতে পারবেন না। তাছাড়া মানুষের ক্ষেত্রে কোনও এক দলের প্রতি নরম মনোভাব থাকাটাই স্বাভাবিক। তাই এই প্রশ্নটাই করা হল দুই এআই-কে।
প্রথমে চ্যাটজিপিটি -র ক্ষেত্রে আসা যাক। চ্যাটজিপিটি কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তরই দেয়নি। সেখানে স্পষ্ট জবাব এল, 'এআই ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল হিসেবে, ভবিষ্যতের রাজনৈতিক ঘটনা বা নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে আমি কোনও ভবিষ্যতবাণী বা অনুমান করতে পারি না।' এটি এআই বিশ্লেষণের ব্যর্থতা, নাকি ওপেন এআই -এর নিরপেক্ষ থাকার স্ট্র্যাটেজি, তা অবশ্য জানা নেই।
অন্যদিকে বার্ড-কেও সেই একই প্রশ্ন করে দেখা হল। বার্ড কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এই প্রশ্নের উত্তর দিল। সহজ ভাষায়, মোটামুটি তথ্যগতভাবে নির্ভুল বিশ্লেষণ করল গুগল-এর এআই ।
৩. বাংলা ভাষাবাঙালি যখন, বাংলা ভাষায় এআই -এর লেখা দেখতে উত্সাহ হওয়াটাই স্বাভাবিক। এআই -এর লেখনীতে বাংলা ভাষার মাধুর্য্য ফুটে ওঠে কিনা, তা দেখতে বাংলাতেই প্রম্পট দেওয়া হল।
বলা হল, ‘আগামী রবিবার সন্ধ্যায় নিজের বাড়িতে রবীন্দ্রজয়ন্তীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়ে বন্ধুকে ১০০ শব্দের একটি চিঠি লেখ।’
চ্যাটজিপিটি মোটামুটি কাজ চলার মতো বাংলায় চিঠি লিখে দিল। পড়তে সুন্দর না লাগলেও, ব্যাকরণগতভাবে এতটা উন্নতি সত্যিই চোখে পড়ার মতো। প্রাথমিক পর্যায়েই পরিস্থিতি এমন হলে, ৫-৬ বছর পর এটি কোথায় পৌঁছে যাবে, তা সত্যিই ভাবনার বিষয়।
অন্যদিকে গুগল-এর বার্ড-এও এই একই প্রম্পট দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানে বাংলা ভাষায় আপাতত সমর্থন নেই বলে জবাব এল।
সব মিলিয়ে এআই চ্যাটবটের বাজার এখন বেশ উদীয়মান। সময়ের সঙ্গে, সার্চ ইঞ্জিনের মতোই এগুলি মানুষের জীবনের অংশ হয়ে উঠতে পারে। বিভিন্ন ভাষাতে সময়ের সঙ্গে আরও দক্ষ হয়ে উঠবে এই চ্যাটবটগুলি।
সেই বাজারে চ্যাটজিপিটি এগিয়ে থাকবে, নাকি গুগলের বার্ড, তার জবাব সময়ই দেবে।